হার্ট অ্যাটাক এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন

অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক এর মতো দূর্ঘটনা মানবদেহে সংঘটিত হলেও অনেকে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। ফলে অনেক দেরি হয়ে যায়। আজ তাই হার্ট অ্যাটাক এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো

হার্ট অ্যাটাক এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন
হার্ট অ্যাটাক এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ


বলার অপেক্ষা রাখেনা হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরের জন্য জরুরি ও কতোটা আবশ্যকীয় একটি তন্ত্র। কোন কারণে এটি অকেজো হয়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। কেননা শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণটাই হৃদপিন্ডের উপর নির্ভরশীল। রক্ত সঞ্চালন না হলে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তা-ই রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য হলেও হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে হবে। অন্যথায় বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না।

এই হৃদপিণ্ডের একটি অত্যন্ত সাধারণ ও কষ্টদায়ক অস্বাভাবিকতা হলো "হার্ট অ্যাটাক"।
 হার্ট অ্যাটাক একজন মানুষকে নিমিষেই দুর্বল করে দিতে সক্ষম। বয়স্ক বা বৃদ্ধ মানুষদের অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কারণেই পরপারে চলে যেতে হয়। আর মধ্যবয়সী মানুষদের জন্য যে হার্ট অ্যাটাক খুব সুবিধার ব্যাপার তাও কিন্তু নয়। বয়স যা-ই হোক না কেন, হার্ট অ্যাটাককে কখনো অবহেলার চোখে দেখা উচিত নয়। হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করার জন্য ই কে জি এর মতো বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। তবে আজকের এই আর্টিকেলে মূলত হার্ট অ্যাটাকের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। চলুন জেনে নেই হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গ গুলো কী কী।

হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করতে দেহে কিছু প্রাথমিকের লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলো হলো -


১) বুকে ব্যাথাঃ

বয়স ও রোগ ভেদে বুকে ব্যথার কারণ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে হার্ট অ্যাটাকের বুকের ব্যথাটা যেন একেবারেই অন্যরকম। এ ব্যাথা সুঁচালোও নয়, আবার তীক্ষ্ণও নয়। বিভিন্ন হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া ব্যক্তির বলা তথ্য অনুযায়ী, বুক ব্যথাটা হয় একেবারে চাপ লাগার মত। তাদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের সময় যখন বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, তখন তাদের মনে হয়, বুকের ভেতর প্রচুর ভারী কোনো একটি বস্তু বসে আছে। কিংবা কেউ খুব শক্ত করে বুক চেপে ধরে রেখেছে। এ ধরনের তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, হার্ট অ্যাটাকের সময় যে ব্যথাটা হয়, সেটা সাধারণ বুক ব্যাথার মত হয় না। বরং তখন মনে হয় কেউ যেন বুকটাকে খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।


২) দম আটকে যাওয়াঃ

হৃদযন্ত্রের কাজ হচ্ছে, মূলত মানবদেহের সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন করা। সৃষ্টিগতভাবে একে তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র মানব দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াটিকে পর্যালোচনা করার জন্য। কিন্তু যখন এই হৃদপিন্ডে কোনোরকমের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা অ্যাটাক আসে, তখন এর রক্ত সঞ্চালন করার ক্ষমতাটা প্রকৃতপক্ষে কমে যায়। আর রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ফুসফুস ও শরীরের অন্যান্য টিস্যুতে তরল জমা হতে শুরু করে। একই সাথে জমে যাওয়া রক্ত ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে তখন শ্বাস নিতে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই বলা যায়, দমবন্ধ হওয়াটাও হার্ট অ্যাটাকের একটি অন্যতম লক্ষণ।


৩) অতিরিক্ত পরিমাণে ঘেমে যাওয়াঃ

বুকে ব্যথা ও সেইসাথে দম আটকে আসার মত অনুভূতির সাথে যদি শরীর থেকে প্রচন্ড ঘাম নিঃসরণ হয়, তবে তা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কেননা হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের কোনো কারণ ছাড়া-ই শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম নিঃসৃত হতে থাকে। এমন অনেক দেখা গেছে যে, প্রচুর ঠাণ্ডা পরিবেশে থেকেও হার্ট অ্যাটাকের শিকার রোগীদের গায়ের জামা ঘামে একেবারে চুপচুপ হয়ে ভিজে গেছে।


৪) বমি হওয়াঃ

সাধারণত শরীরে যখন কোনো রকমের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তখন মস্তিষ্ক বমির ক্রিয়া ঘটায়। কেননা আমাদের মস্তিষ্ক তখন ধারণা করে যে, শরীরে নিশ্চয়ই কোন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ ঢুকেছে এবং সেই বিষাক্ত পদার্থের কারণেই মানবদেহ অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করেছে। মস্তিষ্কের ধারণা অনুযায়ী সেই বিষাক্ত পদার্থকে বের করে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে বমির ক্রিয়া ঘটানো। হার্ট অ্যাটাকের সময় সাধারনত হৃদযন্ত্রের কোষ দ্রুত নষ্ট হয়ে আসে। এটাও আমাদের মস্তিষ্ক এক ধরনের অস্বাভাবিকতা হিসেবে ধরে নেয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের শিকার রোগীরা বারবার বমি করতে থাকেন।


৫) বুকে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করাঃ

মসলা জাতীয় কোন খাবার অতি মাত্রায় খেলে কিংবা অন্য কোনো কারণেও বুকে প্রচুর জ্বালাপোড়া করতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, বুকে জ্বালাপোড়া করাও হার্ট অ্যাটাকের-ই একটি অন্যতম লক্ষণ


৬) কাঁধের রক্তনালির অস্বাভাবিকতাঃ

আমাদের দু কাঁধে বিশেষ করে বা কাঁধের রক্তনালী হার্ট অ্যাটাকের কারণে অতিমাত্রায় ফুলে যেতে পারে। তাই যদি কখনো উপরোক্ত সমস্যা গুলোর সাথে কাঁধের রক্তনালীও ফুলে উঠতে দেখা যায়, তবে বুঝে নিতে হবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।


৭) মাথা হঠাৎ করে হালকা হয়ে আসাঃ

হার্ট অ্যাটাক হলে রক্ত সঞ্চালন সারাদেহে কমে যায়। ফলে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে ভালো করে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না। আর এ কারণে মাথা খুবই হালকা লাগার মত অনুভব হয়। ব্যক্তির মনে হতে থাকে তার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে এবং সে ভালোভাবে চোখ তুলে তাকাতে পারে না।


৮) বা হাত ব্যাথা করাঃ

হৃদপিণ্ড দেহের বাঁ দিকে অবস্থিত। তাই হৃদপিন্ডের কিছু হলে বাঁ দিকের শরীরের অঙ্গ গুলোর উপর দিয়ে অনেক ব্যথা-ই প্রবাহিত হতে থাকে। হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বা হাত ব্যথা করা। প্রচন্ড পরিমাণের যখন বাঁ হাত ব্যথা করবে, তখন বুঝে নিতে হবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। শুধুমাত্র বাঁ হাত ব্যথা হতে পারে এমন কোনো কথা নেই। একই সাথে হার্ট অ্যাটাকের সময় বাম ও ডান উভয় হাত-ই ব্যথা করতে পারে।



উপরোক্ত লক্ষণগুলো ছিল মূলত হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। উক্ত লক্ষণ গুলো যদি কারো ভেতর দেখা যায়, তবে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দেরি করলে অনেক অঘটন-ই ঘটে যেতে পারে। তবে উপরোক্ত বিভিন্ন লক্ষণগুলো কাকতালীয়ভাবে অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে মিলে যেতে পারে। এ জন্য হার্ট অ্যাটাক আসলেই হয়েছে কি-না তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।