7 ইলেভেনের স্লারপিঃ এক অজানা পানীয়র গল্প

এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, স্লারপি হল 7 ইলেভেন সংস্থা দ্বারা বিক্রি হওয়া হিমায়িত স্বাদযুক্ত এক ধরনের পানীয়। 1967 সালে, 7 ইলেভেন আইসিইই কোম্পানির কাছ থেকে পণ্যটির লাইসেন্স করে এবং স্লারপি হিসাবে বিক্রি শুরু করে। এবং ক্রমশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছায়। ঘুরে দেখা যাক এর ইতিহাস।

7 ইলেভেনের স্লারপিঃ এক অজানা পানীয়র গল্প
7 ইলেভেনের স্লারপিঃ এক অজানা পানীয়র গল্প | ছবি delish.com থেকে সংগ্রহীত


এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, স্লারপি হল 7 ইলেভেন সংস্থা দ্বারা বিক্রি হওয়া হিমায়িত স্বাদযুক্ত এক ধরনের পানীয়। 1967 সালে, 7 ইলেভেন আইসিইই কোম্পানির কাছ থেকে পণ্যটির লাইসেন্স করে এবং স্লারপি হিসাবে বিক্রি শুরু করে। এবং ক্রমশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছায়। এবার একটু বিশদে স্লারপি সম্বন্ধে জানা যাক। দেখা যাক এর ইতিহাস।


অন্যান্য আরও অনেক দুর্দান্ত সব আবিষ্কারের মতই স্লারপিও একটি দুর্ঘটনার ফল স্বরূপ তৈরি হয়েছিল। 1950 এর দশকের শেষের দিকে, কানসাস সিটির ডেইরি কুইন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক ওমর কেন্ডলিকের হাত ধরেই এই পানীয় তৈরী হয়। কেন্ডলিকের একটি সোডা ফাউন্টেন ছিল, যেটি কোন কারণে একদিন ভেঙে যায়। তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই কেন্ডলিকে তার সোডাগুলি ঠিক রাখার জন্য সেগুলিকে ফ্রিজে রাখতে হল। পরে যখন সেগুলি বাইরে বের করা হল, দেখা গেল সেগুলি হিমশীতল ও কিছুটা কাদাটে ভাব ধারন করেছে। ভয়ে ভয়ে সেদিন তিনি সেই পানীয় গ্রাহকদের দিলেন। কিন্তু ফল হল উল্টো। গ্রাহকরা তার এই নতুন পানীয় দারুন পছন্দ করলেন। লোকমুখে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল নতুন ধরনের পানীয়ের কথা। এবং এই পানীয়ের জন্য বারবার অনুরোধ আসতে লাগল।


বুদ্ধিমান কেন্ডলিক বুঝতে পারলেন এই পানীয় লোকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। বুদ্ধিমান ওমর কেন্ডলিক এরপর আর সময় নষ্ট না করে একটি গাড়ি থেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ইউনিট ব্যবহার করে তার দোকানের পিছনের দিকের ঘরে একটি মেশিন তৈরি করে ফেললেন যা ফ্লেজারে মিশ্রণ, জল এবং কার্বন ডাই অক্সাইড একত্রিত করে এবং জমে যাওয়া শীতল সোডা তৈরি করে।


এরপর কেন্ডলিক তার এই নতুন পণ্যটির জন্য একটি নাম ও লোগো তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। রুথ ই টেইলর নামক এক মহিলা শিল্পীর হাতে এই কাজের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল। তৈরি হল নতুন লোগো এবং পণ্যটির নাম দেওয়া হল ‘আইসিইই’। সেই লোগো আজও ব্যবহার হয়ে আসছে আইসিইই-র ব্র্যান্ড হিসাবে। এরপর ডালাসে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং উত্পাদনকারী সংস্থার সহায়তায়, আইসিইই মেশিনটি পুনরায় ডিজাইন করা হল। এরপর 1960 এর দশকের গোড়ার দিকে কয়েকটি সুবিধা মতন দোকানে এটিকে বিক্রি করা শুরু হল।


এরপর প্রায় 100 টি দোকানে সাফল্যের সাথে প্রচারিতও জনপ্রিয় হওয়ার পর 1965 সালে, 7 ইলেভেন ওমর কেন্ডলিকের কাছে থেকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন মেনে চলার সাপেক্ষে এই মেশিনটির লাইসেন্স প্রাপ্ত করল। তাদের মধ্য অন্যতম ছিল 7 ইলেভেন এই পণ্যের জন্য অন্য একটি নাম ব্যবহার করবে, এবং আমেরিকাতে কেবলমাত্র 7 ইলেভেনকেই এই পণ্য বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে, অন্য কাউকে নয়।


পরের বছর অর্থাৎ 1966 থেকে 7 ইলেভেন ‘আইসিইই’ বিক্রি শুরু করল। তারা এই পণ্যের নতুন নামকরণ করল ‘স্লারপি’। স্লারপি নামটি 7 ইলেভেন-এর বিজ্ঞাপন সংস্থার পরিচালক বব স্ট্যানফোর্ড দিয়েছিলেন। পানীয়টি কোন একটি পাইপ বা স্ট্র জাতীয় কিছু দিয়ে টেনে নেওয়ার সময় যে আওয়াজ হয় তার ভিত্তিতেই দেওয়া হল।


ওমর কেন্ডলিকের আবিষ্কৃত পানীয় হাত ঘুরে চলে এল 7 ইলেভেন দখলে। এবার একটু 7 ইলেভেনের ইতিহাসটাও জেনে নেওয়া যাক।


চলুন ফিরে যাই 1927 সালে। তখন এক গ্যালন দুধের দাম ছিল 56 সেন্ট। সেই সময় সাউথল্যান্ড আইস কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন জন জোফরসন গ্রীন। তিনি ‘আঙ্কেল জনি’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা নির্দেশকদের অন্যতম জো সি থমশন এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কোম্পানির 16 টি বরফ ঘরের একটি থেকে দুধ, পাউরুটি ও ডিম বিক্রি শুরু করেন। সেই সময় এই সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষকে অনেক দূরে যেতে হত সেগুলি সংগ্রহ করার জন্য। তার কাছে প্রচুর মানুষ আসতে লাগলেন দুধ, পাউরুটি ও ডিমের জন্য, বিশেষ করে রবিবার ও সন্ধ্যাবেলা যখন দূরের মুদি দোকানগুলি বন্ধ থাকে।


পরবর্তীকালে সাউথল্যান্ড আইস কোম্পানির নাম পাল্টে হয়ে গেল সাউথল্যান্ড কর্পোরেশন। তাদের কাছে ছিল তখন আটটি আইস প্ল্যান্ট ও একুশটি আইস ডক। এদের প্রত্যেকটিতে শুরু হল পণ্য বেচার কাজ। সাধারণ জনতাও খুব তাড়াতাড়ি এই সুষ্ঠ বন্টন ব্যবস্থার লাভ নিতে শুরু করলেন। ফল স্বরূপ মাত্র দশ বছরের মধ্যে সাউথল্যান্ড কর্পোরেশনের রিটেল আউটলেটের সংখ্যা ষাট এ পৌছে গেল।


1928 সালে, জেনা লিরা আলাস্কা থেকে একটি টোটেম পোল বা টোটেমের খুঁটি এনে সেটিকে একটি স্যুভেনির হিসাবে স্টোরের সামনে রেখেছিলেন। টোটেমের খুঁটি হল গাছের মোটা কান্ডকে ব্যবহার করে তৈরি এক রকম স্তম্ভ যা  উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত উত্তর পশ্চিমের দ্বীপপুঞ্জ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষত ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা এবং ওয়াশিংটনের উপকূলীয় অঞ্চল এবং যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ-পূর্ব আলাস্কার স্থানীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরে।


যাইহোক এই টোটেম পোল এতটাই সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো যে পরবর্তী সময়ে প্রত্যেকটি স্টোরের সামনেই এই ধরনের খুঁটি বসিয়ে দেওয়া হল। এর ফলে দোকানগুলি ‘টোটেম স্টোরস’ নামেও পরিচিত হতে শুরু করল।


সেই একই বছরে সংস্থাটি ডালাসের কিছু জায়গায় গ্যাস স্টেশন নির্মাণ শুরু করে পরীক্ষামূলক ভাবে। জো থমসন, কোম্পানির স্টোরগুলিতে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও সরবরাহ করেছিলেন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন যাতে গ্রাহকেরা প্রতিটি দোকানে একই মানের পরিষেবা পেতে পারেন। সাউথল্যান্ড তার আইস স্টেশন পরিষেবা ছেলেদের জন্য একটি ইউনিফর্ম তৈরিও শুরু করে। এটিও খুচরা সুবিধার দোকান হিসাবে সংস্থার সাফল্যের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


1931 সালের বিশ্ব জোরা আর্থিক মন্দার সময় কোম্পানি প্রায় দেউলিয়া হওয়ার জোগার হয়। যদিও সেবার কোনমতে তারা সেই ধাক্কা সামলিয়ে নেয়।


1946 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়ে দোকানের সময় বদলে করা হয় 7 টা থেকে 11 টা। নামও সেই সঙ্গে বদলে 7 ইলেভেন করে দেওয়া হল। যা সে সময় নজিরবিহীন ছিল।


1963 সালে টেক্সাসের অস্টিনে একটি স্টোর সারা রাত খোলা থাকার পরে গ্রাহকের চাহিদা মেটানোর জন্য 7 ইলেভেন চব্বিশ ঘন্টা সময়সূচী নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। পরে টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থ এবং ডালাসের পাশাপাশি নেভাদায় লাস ভেগাসেও 24 ঘন্টার স্টোর স্থাপন করা হয়েছিল। এভাবেই বিশ্বের অন্যতম সেরা চেইন স্টোরস-এ পরিণত হল 7 ইলেভেন।


গাড়ি বিক্রির সাথে সাথে বাড়তে থাকে মানুষের অন্যান্য চাহিদাও। একই জায়গায় সব পণ্য পেয়ে গেলে তাদের পক্ষে অনেক সুবিধা ও তাতে সময়ও অনেক কম খরচ হয়। এই ধারনা থেকে ছোট ছোট সুপার মার্কেট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। এবং তাতে যে বেশ সাড়া পড়ে গিয়েছিল তা বলাই বাহুল্য। বিশেষত শহর থেকে একটু ভিতরের দিকে শহরতলী বা গ্রাম্য অঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। 1963 সালের মধ্যেই 7 ইলেভেন তৈরি করে ফেলে প্রায় এক হাজার ছোট ছোট সুপার মার্কেট। মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী একই ছাদের তলায় পেতে শুরু করেন। সপ্তাহের শেষে 7 ইলেভেন স্টোরগুলি চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকার জন্য আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।


এরপর 1966 সাল থেকে 7 ইলেভেন ‘আইসিইই’ থেকে লাইসেন্স নিয়ে নতুন একটি পণ্য বাজারে বিক্রি শুরু করল। তারা এই পণ্যের নতুন নামকরণ করল ‘স্লারপি’। এই পানীয়ের প্রতি উন্মাদনা আগে থেকেই ছিল, কাজেই 7 ইলেভেন তাদের নতুন স্লারপি বাজারে আনার সাথে সাথেই আরও ভিড় ক্রমশ বাড়তে শুরু করে তাদের স্টোরগুলিতে। একসাথে 1500 টি দোকানে এর বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হয়, এর আগে যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।


স্লারপির দৌলতেই 1969 সালের মধ্যে আমেরিকাতে 7 ইলেভেনের আউটলেটের সংখ্যা ছাড়াল প্রায় 3500। এরপর তারা কেনাডা-তে আউটলেট খোলার মাধ্যমে পা রাখল আন্তর্জাতিক বাজারে। এরপরে সংস্থাটি দক্ষিণে মেক্সিকো গিয়ে একটি লাইসেন্স চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। 1974 সালে, সংস্থাটি তার 5000 তম আউটলেট তৈরির মাইলফলক পৌঁছায়।


এরপর ছোট ছোট নানান যন্ত্র বাজারে আসতে শুরু করে। যেমন অটোমেটিক পানীয় সরবরাহকারী মেশিন। 7 ইলেভেনের কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। বাজারের বাড়তে থাকা চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে অটোমেটিক পানীয় সরবরাহকারী মেশিন স্থাপন করা শুরু হয়। কম জায়গায় ভালো ব্যবসার সুযোগ তৈরি হতে থাকে। স্লারপির পাশাপাশি আরও নানান ধরনের পানীয় যেমন কফি ও হট-ডক অথবা স্যান্ডউইচের মতন পণ্য তারা বাজারে পরিবেশন করতে শুরু করে।


আমেরিকার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও 7 ইলেভেনের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাদের পণ্য ও বিভিন্ন সুবিধাগুলি দ্রুত অন্যান্য দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 7 ইলেভেনের একের পর এক আউটলেট খুলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, গুয়াম, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে। 1970 দশকের শেষের দিকে এবং 1980 এর দশকের গোড়ার দিকে 7 ইলেভেনের আন্তর্জাতিক আউটলেটগুলির সংখ্যা ছিল প্রায় 2500 স্টোর।


বিদেশের বিভিন্ন দেশের মানুষেরা কাজ করে বেশি এবং বাড়িতে কম সময় ব্যয় করে। সারাদিন বাইরে থাকার দরুন তাদের প্রত্যাশা ও রুচিবোধেরও পরিবর্তন হতে শুরু করে। তারা তাদের পছন্দের পানীর ও খাদ্যগুলির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ খুঁজতে শুর করে। 7 ইলেভেন এই কথা মাথায় রেখে তাদের স্লারপির স্বাদ ও গন্ধে পরিবর্তন আনতে শুরু করে। গ্রাহকরা কেবল পণ্য পরিবেশনের গতি এবং পরিষেবাটি সহজতর করার জন্য নয়, বৈচিত্র্য, গুণমান এবং মানও দাবি করেন। 7 ইলেভেন সেদিকে প্রখর দৃষ্টি রাখে। তাদের পণ্যের গুণগত মান কোন অবস্থাতেই যেন নীচে দিকে না নামে সেদিকে প্রথম থেকেই তাদের নজর ছিল।  নব্বইয়ের দশকের স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ধারার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে 7-ইলেভেন। তাদের 15000 স্টোরগুলিতে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের সাথে সাথে ছুটির দিনেও প্রতিদিন সরবরাহ করা তাজা খাবারের পণ্যগুলির জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে।


পণ্যর গুণমানের সাথে সাথে নজর দেওয়া হয় পরিবরহণ ও পণ্য সরবরাহের দিকেও। উন্নতমানে লজিস্টিক সিস্টেমের সাহায্যে তাদের সুস্বাদু ও টাটকা খাবার তারা পৌছে দেয় তাদের আউটলেগুলিতে। নিজস্ব অত্যাধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা পৌছি দিচ্ছে তাদের বিভিন্ন উপাদেয় পণ্যগুলি। 7 ইলেভেনের জনপ্রিয় পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে, Café Select® coffees, Deli Central™ sandwiches, World Ovens® pastry bakery items, and the Café Cooler™ frozen Cappuccinos। 7 ইলেভেনের পণ্যের গুণগত মান, সহজলভ্যতা ও বিভিন্নতা তাদের ব্যাবসার মূল চাবিকাঠি।


2000 সালের গোড়ার দিকে, 7 ইলেভেন গ্রাহকদের ভালোবাসা ও নির্ভযোগ্যতার বিচারে শ্রেষ্ট স্থান দখল করে। ফলস্বরূপ তাদের আউটলেটের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে 25000 এরই বেশি।


নিজের দক্ষতায় ও নতুন নতুন চিন্তা ভাবনায় 7 ইলেভেন অনেক ফাইলফলক পেরিয়ে এসেছ গর্বের সাথে। যা মানুষের চিন্তারও বাইরে ছিল এমন সব পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়িত করেছে যা পরবর্তীকালে অন্যান্য সংস্থাগুলিকে পথ দেখিয়েছে নতুন করে। তারাই প্রথম যারা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে। তারাই টাটকা খাওয়ার ও পানীয় পৌছে দেয় গ্রাহকদের কাছে। ছোট-বড়  নানান ধরনের অটোমেটিক পানীয় সরবরাহকারী মেশিন স্থাপন করে।


এছাড়াও রয়েছে প্রি-পেউড কার্ডের ব্যবহার, রয়েছে স্ব-পরিবেশন করা এটিএম পরিষেবা, ই-ওয়ালেটে অনলাইন বিল, মানিব্যাক অফার ইত্যাদি। বর্তমানে আমরা এই পরিষেবাগুলির সাথে সকলেই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু একটা সময় এই বিষয়গুলি আমাদের ধারনার বাইরেই ছিল। 7 ইলেভেনের হাত ধরে এমন ছোট ছোট অথচ প্রয়োজনীয় ও সাশ্রয়কারী চিন্তার বিকাশ ঘটেছে।


অন্য একটি জায়গাতেও 7 ইলেভেন বোধহয় সকলের থেকে আলাদা। আমার নিজেদের উন্নতির সাথে সাথে ফেলে আসা সময় ও স্থানকে ভুলে যেতে চাই। কিন্তু 7 ইলেভেনের জন্মস্থান সেই আইস ডকটির কথা মনে আছে নিশ্চই। শুরুতেই যার কথা বলেছিলাম। সেই স্টোরটি আজও রয়েছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে বেশ কয়েকবার তার পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছে। 1995 জীর্ন হয়ে পড়া আইস ডকটি বন্ধ করতে বাধ্য হয় সংস্থা। এখনও 7 ইলেভেনর সদর দপ্তর তার জন্মস্থানেই রয়েছে। বিশ্বজুড়ে 7 ইলেভেনের বর্তমানে আউটলেটের সংখ্যা প্রায় 53000।


আবার ফিরে আসি স্লারপি-র কথায়। স্লারপির জনপ্রিয়তা পরিচয় কয়েকটি পরিসংখ্যান দিলে সহজেই বোঝা যাবে। একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, কানাডিয়ানরা প্রতি বছর গড়ে 30 মিলিয়ন স্লারপি পান করেন। মনিটোবা-কে (কানাডার পঞ্চম সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ) কুড়ি বছর ধরে স্লারপি রাজধানীর সন্মান দেওয়া হয়েছে। উইনিপেগ (মনিটোবার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর) শহরে 7 ইলেভেন স্টোর থেকে প্রতি মাসে গড়ে 1,88,833 স্লারপি পানীয় বিক্রি হয়। কানাডার বাকী অংশগুলিতে প্রতি মাসে গড়ে 1,79,700 টি স্লারপি বিক্রি হয় যা উইনিপেগকে স্লারপি বিক্রয়ের বিশ্বের শীর্ষ স্থানে তুলে ধরেছে। প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় 66,00,000 স্লারপি পানীয় বিক্রি হয়।


প্রধানত স্লারপিতে যে যে স্বাদ পাওয়া যায় সেগুলি হল, বন্য চেরি, কোকা-কোলা, পিনা কোলাডা এবং নীল রস্পবেরি। স্লারপি পানীয়তে আমরা বিভিন্ন উপাদানের যে পরিমাপ পাই তা হল, ক্যালরি 110, মোট কার্বোহাইড্রেট 27 গ্রাম বা    9%, খাদ্যতালিকাগত ফাইবার 0 গ্রাম, প্রোটিন 0 গ্রাম, ক্যালসিয়াম 20 মিলিগ্রাম, মোট চর্বি      0 গ্রাম, সম্পৃক্ত চর্বি 0 গ্রাম, ট্রান্স ফ্যাট 0 গ্রাম।


এবার আসুন এই জনপ্রিয় পানীয়র ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য দিনগুলি পরপর সাজিয়ে দেওয়া যাক।


1965–66 সালে, আইসিইই থেকে 7 ইলেভেন স্টোরে স্লারপির বিক্রয় স্থানান্তরিত হল। 1967 এর বসন্তকালে স্লারপি মেশিনগুলি সমস্ত 7 ইলেভেন স্টোরগুলিতে বসানোর হল।


1967 সালে একটি মাইলফলক পেরিয়া গেল স্লারপি। তখন আমেরিকার শীর্ষ চল্লিশটি এ.এম রেডিও স্টেশন এফ.এম স্টেশনগুলির জনপ্রিয়তার জন্য তাদের বাজারের শেয়ার হারাচ্ছিল। শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ডিজেরা মরিয়া হয়ে উঠেছিল। স্লারপি ছিল শিশু, কিশোর, তরুণ তথা বয়স্ক সকলেরই প্রিয় পানীয়। এবং এরাই ছিল এ.এম রেডিও স্টেশনের স্রোতাও। সেই সময়  স্ট্যানফোর্ড এজেন্সি স্লারপিকে আরও প্রসারিত ও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল যা মজার কণ্ঠস্বর এবং কৌতুক মেশানো এক নতুন ধরনের স্বাদ পরিবেশন করল। বিজ্ঞাপনগুলির সাথে মজার কণ্ঠ এবং সাউন্ড এফেক্টস সহ যে কৌতুক সৃষ্টি করা হল তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এবং মানুষকে কিছুটা হলেও আবার এ.এম মুখী করেছিল।


ক্রমবর্ধমান যুব শ্রেণীর বাজারকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপনের সৃষ্টি হয় সেই সময়। কাপগুলিকে করে দেওয়া রঙিন ও আকর্ষনিয় ডিজাইনের। কিছু কিছু ট্যাগলাইন বেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে।  ‘ফুল্লা বুল্লা’, ‘কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’, এবং ‘আমাকে চুম্বন কর’ ধরনের ট্যাগলাইনগুলি সকল বয়েসের গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়।


1970 সালে 7 ইলেভেনের দৌলতে স্লারপির বিজ্ঞাপন এত জনপ্রিয় ছিল যে রেডিও ডিজের কাছে স্লারপির নতুন বিজ্ঞাপনের জন্য অনুরোধ আসতে থাকে। 1970 এর মাঝামাঝি সময়ে প্রচারের জন্য একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের গান সংযোজিত হয়েছিল, Dance the Slurp। রেডিও জিংলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা টম মেরিম্যানের লেখা এই গানটি। এটি বিনামূল্যে, প্রচারমূলক 45 আরপিএম রেকর্ডে 7 ইলেভেন স্টোরগুলিতে পাওয়া যেত। গানের ছোট সুরটি তখনকার সময়ে প্রচুর হিট হয়েছিল এবং এর প্রভাব এমনকি 1990-এর দশকের শেষের দিকেও প্রসারিত হয়েছিল, যখন টারেন্টাব্লালিস্টস কাট কেমিস্ট এবং ডিজে শ্যাডো তাদের 1999 সালের অ্যালবাম ব্রেইনফ্রিজের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে গানটি ব্যবহার করেছিলেন।


1972 সালে, বেসবল স্লারপি কাপ, জনি বেঞ্চ, পিট রোজ এবং অন্যান্য প্রিয় খেলোয়াড়দের চিত্র সহ প্লাস্টিকের কাপ বাজারে আসতে শুরু করে। বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রেরাও জায়গা করে নেন 7 ইলেভেনের স্লারপি কাপের গায়ে।


1973 সালে, তৎকালীন তারকাদের এবং হোনাস ওয়াগনারের মতো প্রারম্ভিক খেলোয়াড়দের চিত্র সহ বেসবল স্লারপি কাপগুলি।


1994 সালে, 7 ইলেভেন কিশোর এমটিভি দর্শকদের লক্ষ্য করে স্লারপির ‘brain freeze’ বিজ্ঞাপনটি পুনর্নির্মাণ করেন।


এপরপ 1995 সালে, মার্কিন পুলিশ আধিকারিকদের বাচ্চাদের বিতরণ করার জন্য ‘Operation Chill’ এর মাধ্যমে বিনামূল্যে স্লারপি কুপন সরবরাহ করা হয়।


1998 সালে, 7 ইলেভেন বাজরে নিয়ে আসে স্লারপি লিপ বাম। সেই বছরই স্লারপির স্বাদযুক্ত গাম বাজারে আসে, যার আভ্যন্তরিন মধ্যভাগে ছিল তরল স্লারপির জেলি।


প্রতি বছর 11 জুলাই, দিন হিসাবে মাপলে সপ্তম মাসের এগারোতম দিন, 7-ইলেভেন 2014 সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় একটি নিখরচায় 7.11 তরল আউন্স (210 মিলি) স্লারপি সরবরাহ শুরু করেছিল। পরে সেটি আর‍ও একটু বেড়ে হয় 12 তরল আউন্স (355 মিলি)।


2002 সাল থেকে প্রতিবছর, ১১ই জুলাই (দিন হিসাবে দেখলে সপ্তম মাসের এগারোতম দিন অর্থাৎ 7 ইলেভেন), সংস্থাটি তার জন্মদিন হিসাবে পালন করে। কেবলমাত্র এই ক্ষেত্রে, গ্রাহকরা অংশগ্রহণকারী স্টোরগুলির দরজা দিয়ে প্রথম 1000 জনকে বিনামূল্যে - 7.11-আউন্স স্লারপি প্রদান করে। অনুমান করা হয় যে এই একদিনে তাদের গ্রাহকদের সংস্থা 9,000,000 এরও বেশি স্লারপি প্রদান করে।


আরও বেশি করে স্লারপির প্রচার ও স্লারপিকে অনেকের কাছে বিনামূল্যে পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই ফ্রি স্লারপি দিবস উদযাপন করা হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কিভাবে পাওয়া যাবে এই পানীয়?


যে কোন 7 ইলেভেন স্টোরে যেতে হবে গ্রাহককে। স্টোরগুলিও এইদিনের বিশেষ সময় অনুযায়ী খুলে যাবে। সময় হল সকাল 11টা থেকে সন্ধ্যা 7টা। যেখানে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হবে স্লারপি মেশিনের সামনে। দোকানের কর্মচারী গ্রাহকের পছন্দ মতন স্বাদের স্লারপির কাপ তুলে দেবেন তাদের হাতে। পর্যাপ্ত স্লারপির ব্যবস্থা থাকলেও কোন কারণে যদি তা শেষ হয়ে যায়, সেক্ষত্রে গ্রাহককে কুপন কেটে দেওয়ার নিয়ম চালু আছে। যে কুপনটি ব্যবহার করে 12ই জলাই থেকে আগামী 30 দিনের মধ্যে গ্রাহক তার পছন্দের স্লারপি সংগ্রহ করতে পারবেন।


ভারতবর্ষে যদিও এখনও সেভাবে 7 ইলেভেনের ব্যবসা শুরু হয়নি। বেশ কয়েক বছর যাবত এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা চলছে। ফিউচার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শ্রী কিশোর বিয়ানির তরফে বিশ্বের বৃহত্তম স্টোর চেইন সংস্থা হিসাবে বিবেচিত গ্লোবাল রিটেইল চেইন 7 ইলেভেনকে ভারতে আনার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তাঁর মত অনুযায়ী, সংস্থাটি কমপক্ষে পরবর্তী দু-তিন বছরের জন্য কেবল মুম্বাইয়ে 7 ইলেভেন দোকান স্থাপনের দিকে মনোনিবেশ করবে। কাজেই আশা করা যায় আর কিছুদিনের মধ্যেই আমরাও এই স্লারপি পানীয়ের স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ পেতে চলেছি।


এ বছর পালিত হচ্ছে 7 ইলেভেনের 94তম স্লারপি দিবস। কোভিড মহামারীর কথা মাথায় রেখে এবছর কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। 7 ইলেভেন এ্যামের মাধ্যে নাম রেজিস্টার করে এ বছর নিতে হবে স্লারপির স্বাদ। বাড়িতে পৌছে যাবে গ্রাহকের প্রিয় এই পানীয়। এ বছর যত নাম রেজিস্টার হয়েছে তার সংখ্যাটা নেহাত মন্দ নয়।


এক কথায় বলতে গেলে প্রতিবছর 11ই জুলাই গরমের সময়ে গ্রাহকদের বিনামূল্যে ঠান্ডা ও সুস্বাদু স্লারপি দিয়ে অভ্যর্থনা করা ও তাদের প্রতি 7 ইলেভেনের প্রতি তাদের আস্থা অটুট রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোই সংস্থার মূল লক্ষ। গ্রাহকের ভালোবাসা অটুট থাকুন তাদের প্রতি। আমরাও অপেক্ষায় থাকি এক স্বর্গীয় পানীয়ের স্বাদ গ্রহণের।