The Broken News: বলিউড কি ভাল সিরিজ নিয়ে কথা বলতে ভুলে গেল?
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে আমরা যেমন নতুন ধরনের কন্টেন্ট দেখার সুযোগ পেয়েছি, ঠিক তেমনি এমন সব আর্টিস্ট তাদের কাজ দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন যেটি তারা মেইনস্ট্রিমে পান না। সেক্রেড গেমস, মির্জাপুর, অথবা অসুর এর মাধ্যমে ওটিটির যে শক্তিশালী যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটি যেন অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছে।

আমি জানি মানুষ পঞ্চায়েত, কোটা ফ্যাক্টরী, মেড ইন হেভেন ইত্যাদি সিরিজের কথা বলবে। কিন্তু, তারপরও নেটফ্লিক্সের মত প্রতিষ্ঠান যখন বলিউডে কাজ করার ব্যাপারে নতুন করে ভাবনা চিন্তা শুরু করে; ভারতের ওটিটি’র ভবিষ্যৎ তখন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সনিলিভ, জি ফাইভ বা এমাজন যদিও সাকসেসফুলি কিছু সিরিজ রান করাতে পেরেছে। কিন্তু ভারতের ওটিটি সাকসেস কিন্তু শুরু হয়েছিল এই নেটফ্লিক্সের হাত ধরেই, এই ভাল সিরিজের পাশাপাশি বিলো এভারেজ সিরিজ যখন আসে তখন সেই যাত্রা যেন একটু হলেও স্তিমিত হয়ে পড়ে! আর তারচেয়েও দুঃখের বিষয় হচ্ছে যখন এই বিলো এভারেজের ভিড়ে হঠাৎ করেই একটি উল্লেখযোগ্য সিরিজ চলে আসে আর আপনি তার কথা জানতেও পারেন না, বা আগ্রহ পান না।
এইরকম ঘটনাই ঘটেছে গত ১০ জুন জিফাইভে মুক্তি পাওয়া দা ব্রোকেন নিউজ সিরিজের ক্ষেত্রে। আমি জানি না, কিন্তু জার্নালিজম নিয়ে বলিউডে এত ইন ডেপথ কাজ মেইনস্ট্রিমেও কখনো হয়েছে কি না, সিরিজ তো অনেক দূরের ব্যাপার।
অসাধারণ কাস্টিং, গুণগত কাঠামোর গল্প আর দুর্দান্ত ক্লাইম্যাক্স এতসবের পরেও একটি সিরিজ কিভাবে আলোচনার বাইরে থেকে যায় সেটির জন্য আসলে আলাদা গবেষণা করা দরকার। আজ আমরা এখানে সিরিজটির ভাল এবং খারাপ দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করবো যাতে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেবেন যে এটি আপনি জিফাইভে দেখবেন কি দেখবেন না!
সিরিজের দুর্বলতা
হ্যা দুর্বল দিক সিরিজের অবশ্যই আছে, কিন্তু তাতে গল্পের আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমে যায়নি। গল্প শুরুই হয়েছে বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধমূলক কর্মকান্ড ও তার সাথে শহরের দুটি লিডিং নিউজ চ্যানেলের রিপোর্টারদের জড়িয়ে পড়াকে ঘিরে।
কিন্তু আপনি যখন দুটো ঘটনাকে সমান্তরালভাবে পর্দায় দেখাতে চান, দুটো ঘটনার ট্রিটমেন্টও আপনাকে সমানভাবেই দিতে হয়। কিন্তু লেখক কোন কারণে সেই ট্রিটমেন্ট দিতে ব্যর্থ হন, যার কারণে গল্পের গতির সাথে দর্শক ঠিকমত খাপ খাওয়াতে পারে না, তখন দর্শকের সেই সিনেমা বা সিরিজ দেখার প্রতি একটি অনীহা চলে আসে।
শুরুর দিকে অগোছালো কিছু সিকোয়েন্সের কারণে আমারও মনে হচ্ছিল এই সিরিজিটি শেষ পর্যন্ত আমি দেখবো কি দেখবো না! সৌভাগ্যক্রমে আমি সেটি করিনি। আরেকটি দুর্বলতার কথা বলতে গেলে সেটি হতে পারে অসম্পূর্ণ সাবপ্লট, গল্পের সাবপ্লটগুলো খুব সুন্দর করে সাজানো হয়নি সেটি দীপংকর স্যানাল চরিত্রের ফ্যামিলি লাইফ হোক বা আমিনা কুরেশি চরিত্রটির পরকীয়া সম্পর্ক।
একটি গল্প চরিত্রের ডায়নামিক্সের উপর নির্ভর করেই দর্শককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে, কিন্তু অগোছালো বা সাবপ্লটগুলোর গভীরতা না থাকার দরুণ দর্শক প্রথমদিকে চরিত্রের সাথে ঠিক নিজেকে কানেক্ট করতে পারে না। দা ব্রোকেন নিউজের ক্ষেত্রে দর্শক ঠিক এমন সমস্যারই সম্মুখীন হবে।
সিরিজের সবল দিক
চরিত্র
আর কোন অভিযোগ থাকলেও চরিত্র নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই, আপনি যখন কাস্টিং খুব ভালভাবে করেন তখন চরিত্র আপনাআপনি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রায় ১৮ বছর পর ৯০ দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনালী বেন্দ্রে এই সিরিজের মাধ্যমে পর্দায় ফেরেন। তার এই ফেরাটা মোটেও দুর্বল কোন পদক্ষেপ ছিল না।
অভিনেত্রী হিসেবে তিনি যে কতটা তুখোর সেটি তিনি ভালভাবেই দেখাতে পেরেছেন। আমিনা কুরেশি একজন কনফিডেন্ট, স্মার্ট, সৎ আর সোজা-সাপটা নিউজ এডিটর। এই ৪টি দিকই সোনালী বেন্দ্রে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।
রাধা ভারগভ চরিত্রে শ্রিয়া পিলগাওকার ছিলেন খুবই অনবদ্য, একজন ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে তার প্রতিদিনকার জীবন, জটিলতা, ক্রাইমগুলোর সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবেতেই তিনি একদম সাবলীল ছিলেন। সিরিজে অন্যান্য সাপোর্টিং কাস্টও দুর্দান্ত অভিনয় করেছে, তার মধ্যে কামাল ওয়াডিয়া চরিত্রে ফয়সাল রশিদ ছিলেন অন্যতম।
তবে হ্যা, চরিত্রের কথা বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হবে জয়দীপ আহলাওয়াতকে নিয়ে, দীপংকর স্যানাল চরিত্রটি তিনি ছাড়া আর কেউ এত ভাল করতে পারতেন কিনা সেটি আমি বলতে পারবো না! পাতাল লোক খ্যাত এই অভিনেতা দীপংকর চরিত্রটি এত গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে ডার্ক চরিত্র হওয়া সত্যেও আপনি তার প্রতি একটি আলাদা পছন্দ বোধ করতে শুরু করবেন।
আর যদি আমার সাথে একমত হন, তাহলে শেষ পর্বে আপনি শুধু ‘থ’ মেরে যেতে পারেন, সেখানে দীপংকর আপনাকে অনেক বড় শক দিতে চলেছে।
দুর্দান্ত ক্লাইম্যাক্স
ভাল দিকের কথা পরে বলতেই ভাল লাগে, বিশেষ করে ভাল অংশই যখন বেশি করে আপনার চোখে ধরা পড়ে। গল্পের গঠন নিয়ে যে অভিযোগ আমার ছিল শেষ দুটো পর্ব দেখার পর সেই অভিযোগ আমার নিমিষে শেষ হয়ে যায়।
গল্পের এলোমেলো গঠন একটু বোরিং করে ফেললেও শেষ দুটি পর্ব আস্তে আস্তে সেই জায়গাটার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। মিডিয়ার যে নোংরা রূপের কথা আমরা মাঝে মাঝে আমাদের বাস্তব দুনিয়াতে দেখি বা জানি, সেটারই একটি অংশ খুবই সাবলীলভাবে দেখানো হয় এই সিরিজটাতে, গল্পে যেমন আবেগী অংশ গুলোকে ভালভাবে হাইলাইট করা হয় ঠিক সেইভাবে যৌক্তিকতা বা যেটি অনুচ্ছেদের শুরুতেই বললাম নোংরা বাস্তবতাকে সুন্দর করে উপস্থাপন করে।
সিরিজের লেখক মাইক বার্টলেট আর সামবিত মিশরা যে গল্পের মোড় এত সুন্দর করে ঘুরিয়ে দিবেন সেটি শুরুর দিকে আপনি বুঝতেই পারবেন না। সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ ভারতে খুব কমই হয়েছে। হলেও সেগুলো নিয়ে খুব আলোচনা হয়নি, দুর্ভাগ্যক্রমে দা ব্রোকেন নিউজের মত কাজও সেই তালিকায় চলে গেছে।
এই ছিল আমার আর্টিকেল, আমি জানি না কতটুকু সুন্দর করে আমি সিরিজের কথা বলতে পেরেছি কিন্তু এরকম একটি সিরিজ আলোচনার বাইরে চলে যাবে সেটি আসলেও দুঃখজনক। এই বিলো এভারেজ কাজের ভিড়ে দা ব্রোকেন নিউজের মত একটি সিরিজ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে না যায় সেটাই একমাত্র প্রার্থনা!